কোল্ড কফি
মন্দিরা গাঙ্গুলী
এখনো পাঁচটা বাজতে বারো মিনিট বাকি, রিমি পৌঁছে গেছে শপিং মলের ফুডকোর্টে। অর্ক আগে থেকেই এসে বসে আছে। আগে তো পাঁচটা মানে অর্কর পাঁচটা পনেরো আর রিমির পাঁচটা চল্লিশ। রিমি দেরি করত বলেই অর্ক পনেরো মিনিট পরে আসতো, আর অপেক্ষা করত কোল্ডকফি নিয়ে। অবশ্য এই পাঁচ বছরে অনেক কিছুই তো বদলে গেছে। তখন ওরা কলেজে পড়ত, এখন দুজনেই চাকরি করছে।
রিমিই আগে দেখে, কোনার দিকের একটা টেবিলে বসে অর্ক, সামনে কফির কাপ। এবার অর্ক দেখতে পেল রিমিকে, হালকা হলুদ কুর্তি পরেছে রিমি, অর্কর পছন্দের রং। রিমির প্রিয় নীল টি-শার্টে বেশ লাগছে অর্ককে,
আবারও দুকাপ কোল্ডকফির অর্ডার দেয় অর্ক। রিমিই প্রথম বলে,
— এতদিন পর দেখা করতে চাইলি কেন?
— আমি চাইলাম বলেই তুই এলি? তুই চাসনি? ফোনে যতই মিথ্যে করে বয়ফ্রেন্ড আছে বলেছিলি, ঠিক জানি, কেউ নেই।
— কোন বয়ফ্রেন্ড হতে পারেনা!
— একজন আছে তো ক্লাস টেন থেকে!
— সেসব কেটে গেছে। পাঁচ বছর পেরেছি, সারাজীবনও পারব। যাই হোক, কেন ডেকেছিস বল্?
— বুঝতে পারছিস না কেন?
— কি করে বুঝব, তোর মনের কথা?
— আবার মিথ্যে বলছিস? তুইই তো বুঝিস! বুঝিস না?
রিমি চোখ আচমকা সরিয়ে নিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে থাকে, সামনে ফোয়ারা, চারদিকে বাঁধানো জায়গায় কত রঙিন পোশাকের ছেলে মেয়ে বসে। পাশ দিয়ে পার্কিংএ গাড়ি পরপর আসছে যাচ্ছে, ওপর থেকে খুব সুন্দর লাগছে। অর্ক বলে ওঠে আবার, — কিরে, বল্? কি জন্য ডাকলাম।
— পাঁচ বছর আগে ব্রেকআপ হয়েছে, এতদিন যোগাযোগও ছিলনা। কাল ফোনে ডাকলি তাই এলাম।
— এই প্রথম সময়ের আগে এলি আমার পছন্দের রং পরে, এই দিনটার জন্য কতদিন অপেক্ষা করে আছিস বলেই না! তোর চোখ বলছে আমার জন্য এখনো তুই আগের মতই ভাবিস।
— আসল কথা বল্?
— এত তাড়া কিসের! রোজই কথা হবে এখন।
— আবার ঝগড়া করবি, কষ্ট দিবি, তা হবেনা। সবকিছু মিটিয়ে ফেলতে চাইনা ব্যাস।
— বাজে কথা! তুইই ঝগড়া করতিস। এর সাথে কেন কথা বললাম, তার সাথে কেন ওখানে গেলাম, খালি সন্দেহ! ফোন না ধরলে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে ছাড়তিস ।
— আর, তুই? কোথাও গেলে ফোন করে পাগল করে দিতি, কার সাথে গেছি, কী করছি, কখন ফিরব!
— বেশ করব। এত যখন আমি খারাপ, আর কাউকে জোটালি না কেন? বিয়ে করার কথাও ভাবলিনা কেন? বসে তো আছিস আমার আশায়!
— তোর আশায় বসে থাকার কোন প্রশ্নই নেই।
— তোকে আমার চেনা আছে, আমি ছাড়া আর কারো সাথে ঝগড়া করে তোর শান্তি হবেনা বুঝলি? কফিটা খা এবার।
একটু থেমে অর্ক বলে,
— দেখ রিমি, কোম্পানি আমায় ইংল্যান্ড পাঠাতে চাইছে কম করে তিন বছরের জন্য। এই সময়ে তোর যদি বিয়ে হয়ে যায়!
— আমার বিয়ে? হ্যাঁ, হতেই পারে। পারে কেন, হবেই তো। তাতে তোর কী? তুই আমার কে রে? ঠিকানাটা দিস, কার্ড পাঠিয়ে দেব।
— তার আগে তোর আশীর্বাদ, এনগেজমেন্ট প্রোগ্রামে নিমন্ত্রণ কর্ দেখি।
— সব অনুষ্ঠানে তোকে ডাকব, এ কোথায় ঠিক হল?
— ঠিক তো হয়েই আছে। শুধু আমাদের ড্রেসটা কিনতে হবে বুঝলি।
— তোর এই সব ইয়ার্কি একদম ভালো লাগছেনা। যা না, বিদেশ থেকে একটা সাদা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আয়। সে তোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে, ঠিক হবে। আমার বিয়ে, আশীর্বাদ, হেন তেন নিয়ে তোর মাথা ঘামাতে হবে না।
— আর কোন চান্স নেই তো। তুই যে ঘাড়ে বসে আছিস।
— আমি তোর ঘাড়ে নেই। তোর সাথে কোন সম্পর্ক নেই। নিজে ডেকে এনে ঝগড়া করছিস, লজ্জাও নেই না!
— কিন্তু, আমার ঘাড়ে তুই বসে আছিস, আছিস, আছিস। প্রমাণ দেখাতে পারি।
— কীসের প্রমাণ? খালি বাজে কথা।
অর্ক টেবিলে রাখা বড় খামটা খুলে একটা কার্ড বের করে দেখায়, — দেখ, এখানে তোর নামের নিচেই আমার নাম। দেখে মনে হচ্ছে না, তুই আমার ঘাড়ে?
চমকে ওঠে রিমি, এ তো ওদের দুজনের এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানের কার্ড! নিচে ওদের দুজনের বাবা মায়ের নাম লেখা। ছদ্মরাগ দেখাতে চেয়েও আর পারেনা, দুহাতে মুখ ঢেকে চোখের জল আড়াল করে রিমি। অর্ক এসে পাশে দাঁড়াতেই রিমিও দাঁড়ায় মাথা নিচু করে। অর্ক একটা হাত দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে — চল্, শপিং এ যাই।
খুব ভালো ❤
দারুণ। টক -মিস্টি- ঝালের প্রেমের গল্প।
Ki cute golpo ta… Khub sundor ❤
খুশি হলাম
খুব মিষ্টি একটা গল্প । দারুণ ।
ফাটাফাটি। এগিয়ে যাও।
খুব ভাল লাগল।
খুশি হলাম
👍😘😘
মিষ্টি একটা প্রেমের গল্প। ভীষণ ভালো লাগলো।
খুশি হলাম
দারুন মিষ্টি গল্প
অনেক শুভেচ্ছা