অণুগল্পঃ শেফালি- মন্দিরা গাঙ্গুলী

শেফালি

বালতির জলে লিক্যুইড সাবান আর ডেটল ফেলে ঘর মুছছিল শেফালি। হঠাৎ বলে উঠলো
– জানো তো বৌদি, আমার পাশের ঘরের টুসির মা আমায় খুব হিংসে করে। আসলে আমি তো ওদের মত না, না! নিজের ঘরে বসে সন্ধেবেলা একটু লেখালেখি করি, তা ওদের সহ্য হবে কেন বল?
মনিকা চেয়ারে বসে পটলের খোসা ছাড়াচ্ছিল, চমকে গিয়ে হাত কাটতো আরেকটু হলে। নরাধম মনে হল নিজেকে। লেখিকা কে দিয়ে ঘর মোছা, বাসন মাজা, কাপড় কাচাচ্ছে! বিস্ময়ে গোল্লা চোখে হা হয়ে তাকালো শুধু। ঘর মোছা থামিয়ে পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে শেফালি চোখ মুখ দিয়ে বাঁকা একটা হাসি হাসলো, সেটা একশো ভাগ না হলেও সাতান্ন ভাগ সুচিত্রা সেনের হাসির অনুকরণ। তারপর বললো,

হ্যাঁ, লিখি তো! একটা ডায়েরি আর পেন দিয়েছিল রমা বৌদি, সেটা দিয়েই লিখি।
মনিকা ভাবে পনেরো দিন হল এখানে কাজ করছে শেফালি। ও যে লেখিকা সে জানলে ওকে এসব কাজে কি রাখতো! অন্য কাজ খুঁজে দেওয়া যেত। মহাপাপ হয়ে গেছে। কথাই সরছে না মুখে। অনেক কষ্টে বলে

-মানে, কী লেখ, মানে কী ধরণের আর কি,,,

-নাম লিখি, রমা বৌদি শিকিয়েছে। পোস্ট অফিসে টাকা রাখার সময় টিপ ছাপ দিয়েছিলাম, এবার টাকা জমা দিতে যাব পেন নিয়ে। রোজ সন্ধেবেলা কতবার করে প্যাকটিস করি, জানো!
মনিকা ভাবে, যাক্, নিশ্চিন্ত ।

12 thoughts on “অণুগল্পঃ শেফালি- মন্দিরা গাঙ্গুলী

  1. দেশের বহু গ্রামীণ নারী এখনো শিক্ষার আলো পাননি। হয়ত কেউ, নামটা লিখতে শিখেছেন, কারণ টাকাটা তুলতে হবে ব্যাঙ্ক থেকে। তাই পুরুষটি না করেনি।
    লেখাটা, তেমনই একটি মোচড় দিতে চাইল, নেহাতই হাল্কা চালে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *