২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবেক্ষণের একটি যৌথ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে কবি বিনয় মজুমদার শ্রদ্ধা স্মরণ লিখেছেন কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর। তিনি কবিকে বিস্ময় কবি, ব্যতিক্রমী কবি বলে তাঁকে একটি মীথ আখ্যা দিয়েছিলেন। কবি জীবনানন্দের শব্দভঙ্গির সঙ্গে বিনয় মজুমদারের কখনো কখনো মিল পাওয়া গেলেও দুইজনের উপমা চয়নে দূরত্ব লক্ষ্য করা যায়। বিনয় মজুমদার বেদনা আঘাত সত্বেও ছিলেন আশাবাদী।
ফিরে এস চাকা / আর যদি নাই আসো থেকে উদ্ধার করেছেন:-
অগণন কুসুমের দেশে
নীল বা নীলাভবর্ণ গোলাপের মতো
তোমার অভাব বুঝি; কে জানে হয়তো অবশেষে
বিগলিত হতে পারো ;
এরূপ বিরহ ভালো থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন:-
হাসির মতন তুমি মিলিয়ে গিয়েছ সিন্ধুপারে।
এখন অপেক্ষা করি, বালিকাকে বিদায় দেবার বহুপরে পুনরায় দর্শনের অপেক্ষার মতো —
হয়তো সর্বস্বতায় ভরে গেছে চমকে চমকে।
কবি বিনয় মজুমদার তাঁর বিজ্ঞানী মানসিকতায় প্রকৃতি ও প্রকৃতির জীব জগতের মধ্যে সম্পর্কের সূত্র সন্ধানে থেকেছেন নিমগ্ন ‘কোনোদিন একবার’-এ:-
লতারা কী ভাবে বোঝে কাছে কোন মহীরুহ আছে
তার পরে আরোহণ ক’রে তবে জীবন যাপন
করার সফল কীর্তি কীভাবে যে করে, তা জানি না।
তবু বৃক্ষ সনাতন বৃক্ষই, লতাও শুধু লতা
মৌমাছি ও কুসুমের অভীপ্সার রোমাঞ্চ জানে কি?
কবির বৈশিষ্ট্য হলো যে উপমা বা অনুসঙ্গগুলি তুলে ধরেন যুক্তি ও বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে। এভাবে বিজ্ঞানের সত্যের মধ্য দিয়ে কাব্যরসে পৌঁছে দেবার যে সহজ পদ্ধতির আবিষ্কার করেছেন, তা অভূতপূর্ব, অননুকরণীয়, এককথায় পূর্বাপরহীন। তাঁর মৌলিকত্ব এখানেই।
বিবিধ প্রসঙ্গে মাননীয়া শোভা ভট্টাচার্য স্মরণীয়াসু তে কবি গোবিন্দ ভট্টাচার্য র স্ত্রী শোভা ভট্টাচার্যর অকৃত্রিম স্নেহ ও প্রেরণার উল্লেখ করেছেন স্মরণ অনুষ্ঠানে গত ১৮ই জুলাই ২০০৬ লাবনী সভাঘরে। এই সভায় রোকেয়া বেগম ও শ্রীসারদামা শীর্ষক আলোচনায় আমন্ত্রিত ডঃ মীরাতুন নাহার রোকেয়া বেগমের মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার আজীবন ও অক্লান্ত প্রয়াসের উল্লেখ করে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, মেয়েরা মায়ের জাতি, তাঁরা শিক্ষায় দীক্ষায় যথেষ্ট উন্নত না হলে তাঁদের সন্তানরা তো ‘মানুষ’ হয়ে উঠবে না। উল্লেখ্য, শোভা ভট্টাচার্য এক বিখ্যাত নার্সিং হোমের নগ্ন অর্থলোলুপতা আর যথাযথ চিকিৎসার অভাবের জন্য যাবার সময় না হতেই চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
অবেক্ষণের অনেক প্রয়োজনীয় ও সংগ্রহ যোগ্য লেখায় ভরপুর তথ্যসমৃদ্ধ এই সংখ্যাটিতে যাঁরা লিখেছেন, তাঁরা হলেন – পূর্ণেন্দুপ্রসাদ ভট্টাচার্য, গোবিন্দ ভট্টাচার্য, প্রণব কুমার নিয়োগী (উর্দু সাহিত্য প্রেমিক), অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়, কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর, রাধু গোস্বামী, সমর ভট্টাচার্য, অনিন্দ্য গোস্বামী, অনির্বাণ দত্ত, আদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, দীপ্তভানু দত্ত, সুনীল দেবনাথ, বিদ্যুৎ কুমার মিত্র, ইলা দাস, বিজনবিহারী নন্দী, অরি মিত্র, জগদানন্দ গোস্বামী, নিতাইচন্দ্র দাস, বলাকাশ্রী চক্রবর্তী, রূপশ্রী দাস, রবীন্দ্রকুমার সাহা, হিয়া গোস্বামী, মহাদেব দাস এবং হিন্দোল গোস্বামী।
এরকম অবেক্ষণের বিভিন্ন পুরণো সংখ্যাগুলো থেকে মাঝে মাঝে কিছু কিছু অংশ উদ্ধার করে দেবার ইচ্ছা থাকলো, আশা করি পাঠক পাঠিকা মহল এই বিভাগের প্রতি অপ্রসন্ন হবেন না।
অবেক্ষণ প্রসঙ্গে অনেক কিছু জানতে পারছি। ভালো লাগছে।