প্রবন্ধঃ সবাই তো সুখি হতে চায় – ভূমিকা গোস্বামী

সবাই তো সুখি হতে চায়

ভূমিকা গোস্বামী

সকলেই ভাল থাকতে চায়, কিন্তু ভাল থাকার পথ জানা নেই। শান্তি সুখ আনন্দ পয়সা দিয়ে তো কেনা যায়না। ইন্দ্রিয়ের সুখকেই অনেকে প্রকৃত সুখ ভেবে ভুল করে। পয়সা খরচ করে তাই হয়তো কেউ লাগাম ছাড়া কেনাকাটা করে বসে। কেউ আবার রেস্তোরাঁয় গিয়ে অনেক কিছু খেয়ে ফেলে। সারাদিন হয়তো কেউকানে ই.পি গুঁজে গান শুনেই চলেছে। রাবনরাজাও সুখ চেয়েছিল। পথ জানা ছিলনা, তাই দশটা জিভের তৃষ্ণা চোখের তৃষ্ণা মিটাতে একটার পর একটা অন্যায় করে গিয়েছিল। এতে হয়তো সাময়িক ভাল লাগে, কিন্তু নিত্য ভাল থাকা হয় কি? ডাক্তাররা বলছেন- দেহে যত রোগ হয়, তার বেশিরভাগ রোগই মনের কারণে। মনেই সুখ, মনেই দুঃখ। মনেই ভাল লাগা, আবার মনেই খারাপ লাগা। এসব কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মনটা তো আমাদের কথা শোনেনা। আমরা না চাইলেও, মন- অপ্রিয় কথা, অপ্রিয় অবস্থা বারবার তুলে ধরে। রবীন্দ্রনাথ তাই বলছেন—পাগলা মনটারে তুই বাঁধ। আমাদের মন তিনটি ভাবে বিচলিত হয়। অতীতের শোক মনের শান্তি নষ্ট করে। বর্তমানের মোহ সুখে থাকতে দেয়না। ভবিষ্যতের ভয় আনন্দ পেতে দেয়না। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই শান্তি, সুখ এবং আনন্দ, আমাদের হৃদয়ে আপনা থেকেই রয়েছে,বাইরের অপ্রিয় পরিস্থিতিই আমাদের বঞ্চিত করছে এগুলি থেকে। এ যেন সমুদ্রে নৌকো বিহার করছি, সমুদ্রের ঢেউ-এর দোলায় শান্তিতে,সুখে,আনন্দে দুলছি। যদি কোনভাবে নৌকোয় সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে পড়ে! তাহলেই সর্বনাশ। সাবধানতা চাই। রামকৃষ্ণদেব বলছেন- গায়ে হলুদ মেখে জলে নামো। কুমীরের ভয় থাকবে না। গীতায় ভগবান বলছেন-তেষামহং সমুদ্ধর্ত্তা মৃত্যু সংসারসাগরাৎ। ভবামি ন চিরাৎ পার্থ ময্যাবেশিতচেতসাম। এই কথার তাৎপর্য হল, এইমৃত্যু সংসার সাগরে সৎচিদানন্দের স্মরণ করে এই সংসার সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ কর। যত ইচ্ছে অর্থ রোজগার কর, ক্ষতি নেই। কেবল দেখতে হবে, তা যেন নীতি পথে আসে। জীবন যাপন সমৃদ্ধশালী হোক, আনন্দময় হোক,খুশিতে ভরপুর হোক। দেখতে হবে তা যেন রীতি সম্মত হয়। ঈশ্বরের সৃষ্টি এই জগত। আবার জগতের মধ্যেও তিনি রয়েছেন। তাঁকে ভালবেসে, তাঁর জগতকে ভালবাসতে হবে। কেন এমন ঘুরিয়ে ভালবাসার কী কারণ? কারণ হল এই জগতের সব ভালবাসা বাসিতে আছে দেনা পাওনা। আর যেখানে দেনা পাওনার হিসেব, সেখানে প্রেম থাকতেই পারেনা। প্রেমের তো কোন হেতু থাকেনা। ঈশ্বরের প্রতি প্রেম হল পূর্ণতার প্রতি প্রেম। তাঁর তৈরী এই জগতও পূর্ণ। কারণ জগতের সমস্ত প্রাণে, জড়ে তাঁর অস্তিত্ব। তাই অহেতুক অনম্ত প্রেম জগতের সকলের মধ্যে তাঁকেই দেখে, আবার তাঁর মধ্যে সকলকে। এই প্রেম থেকেই জ্ঞান হয়, বৈরাগ্য আসে। তাহলে স্বউপার্জিত ধন কেবল একা ভোগ করার ইচ্ছে হবে না। নিরন্ন অসহায়কে প্রসাদের মত বেটে দিতে চাইবে মন। আর তখনই তো ঘরে ঘরে, উঠোনে উঠোনে খেলা করে বেরাবে শান্তি সুখ আর আনন্দ।

ReplyForward

4 thoughts on “প্রবন্ধঃ সবাই তো সুখি হতে চায় – ভূমিকা গোস্বামী

  1. কি সুন্দরভাবে সুখ, আনন্দ পাওয়ার কথা বললেন লেখিকা। খুব ভালো লাগলো।

  2. সহজ, সূন্দর করে লেখা জীবনের একটা সুন্দর ছবি।

  3. খুব সুন্দর লেখা। জীবন দিন দিন বড় জটিল হয়ে যায়, এই জটিলতার মধ্য থেকে ই কীসে আনন্দ বুঝে উপভোগ করা অভ্যাস
    করতে হবে।

  4. জীবনের ছবি । খুব সুন্দর করে লিখেছেন ।

Leave a Reply to Soma Sengupta Mukherjee Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *