ধারাবাহিকঃ জীবন কথাঃ যে টেলিফোন আসার কথা ২ – পার্থ বসু

যে টেলিফোন যে টেলিফোন আসার কথা ২

  পার্থ বসু


শুরুতে আমার প্রিয় কবির দু এক পংক্তি মুখড়ায় বাজিয়ে নিই।


“ যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসে নি।
প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে
সূর্য ডোবে রক্তপাতে
সব নিভিয়ে একলা আকাশ নিজের শূন্য বিছানাতে।
একান্তে যার হাসার কথা হাসে নি।
যে টেলিফোন——”( পূর্ণেন্দু পত্রী)

গত শতকের কথা। ১৯৯৮ এর জুন মাসের ঘটনা।সম্ভবত সাত ছয়ের।একটি আত্মহত্যার ঘটনা আলোড়ন ফেলেছিল। কাগজ উত্তাল।ছেলেটি আজকের সেলেব সুশান্ত সিং রাজপুতের মতো কেউ না।কোটিপতি না। প্রেমে অবসাদে ভুগছিল কিনা বলা কঠিন।কাগজ ক’দিন কলকণ্ঠ ছিল ঘটনার আকস্মিকতায়।টেলিফোন বিকল ছিল ছেলেটির। অভিযোগ করে করে ক্লান্ত। একসময় টের পেলগুঁড়ো না দিলে গড়াবে না ফাইল।এই সামান্য কিন্তু জরুরি পরিষেবা পেতেও ঘুষ! বাড়ি ফিরেই ঘেন্নায় ফাঁস লাগালো গলায়।
আমি গল্প ফাঁকিবাজ।গল্প লেখার শ্রমে ঘামে নেই। তাই কবিতায় গল্প টুকি। এই কহিনীটিও টুকেছিলাম আমার প্রতিক্রিয়া সমেত। সংবাদবহুল। তাই ছাপি নি।
আজ পুরনো ডায়েরির পাতায় নিজের কবিতাই আবার পড়লাম। ০৮/০৬/১৯৯৮ য়ে লেখা।
আপনাদেরও পড়াতে ইচ্ছে হলো।
রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই দূর্নীতি, এই বাঁ হাতি লেনদেন, উৎকোচ আজ পত্রে পুষ্পে বিষাক্ত ঝোপঝাড়। সারা উপ মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
কবিতাটির এইখানেই কিছু প্রাসঙ্গিকতা আছে।
আসলে কবিতা নয়। কাঠামো লিখেছি। আপনারাও ভরে দিন ক্রোধ।


যে টেলিফোন আসার কথা /  পার্থ বসু
( ঘুষ না দিয়ে আত্মঘাতী সুহাস গাঙ্গুলীকে মনে রেখে)


যে টেলেফোন আসার কথা
আসে নি।
কারণ প্রয়োজনীয় ঘুষ, প্রথায়
ছিল না সায়                নিজের
আর সুহাস
দেখেছিলেন         কেউ তাহার
পাশে নেই।
এই ক্ষোভেই        গলায় ফাঁস!
আহা রে!                 এই কথাও     
    বলেনি কেউ              বোকা!
                                      উৎকোচের দাবি তো খুব 
                              বেশী না,
বুদ্ধিহীন না হলে এই প্রকার
মরে না কেউ
দূর্নীতিকে রোখা
 অসম্ভব        বরং সহনীয়
করার মতো    দরদামের
                             হিসেব
রপ্ত করা     জরুরি ছিল
সুহাস
    শিখেছিলেন 
                জেনেছিলেন 
                            এসব?
মানিয়ে নেওয়া গেল না
তাই মরা?
পৃথিবী একটুও কি ভালো-
বাসেনি?
যে টেলিফোন           আসার কথা
                                           আসে নি।



কোলকাতার বাতাস কে না জানে
বিষাক্ত                 তাই বলে সবাই
মরছি নাকি?                ওষুধ খাই
খেয়ে 
হাঁফাই আর       যা হবে তা হবার
কথা না ভেবে         আরো দু’দিন 
 বাঁচি।
মোদ্দা কথা   আসলে টিঁকে থাকা
চোখে না দেখে বরং কানামাছির
মতোন কিছু                গোঁত্তা মারি
পাখায়
লোকে যা বলে বলুক           তাহা
না, শুনেই
যে টেলিফোন          আসার কথা
আসে নি।


ভুল দেশে জন্মেছেন সুহাস
এই দেশে সমাজবিরোধীও
শহিদ হয়, নিছক গুণ্ডারাও
রাজনীতির চোখের মণি,প্রিয়।
নেতারা দেন উদার আস্কারা
 ফল কথা তাদেরই হাতে চাবি
সব কিছুর সততা নিয়ে তারা
ভাবিত নন, অযথা হাবিজাবি
আপনাকে তাদের বলে কেহ
করে নি দাবি এখনো আপাততঃ
ঘটনাক্রমে পাখির চোখ রেখে
আড়ালে আছে, দাঁড়াবে পাশে?  
                               আশা নেই।
যে টেলিফোন   আসার কথা
আসে নি।



আমিও তাই ছোঁয়াচ বাঁচাতে চাই
প্রতিবেশী শোকের,কোন ঝুঁকি
নেবো না,গৃহে ফেলে গেছেন শোকের,
শূন্যতার গহীন ছায়া,উঁকি
দিই নি ঘরে,হাহাকারের সীমা
হয় নি পার ঘরের চৌকাঠও
তবু নিছক খবর পড়ে শুনে
                এই যে টুকু কাতর
লিখবো ধারাভাষ্য আঁটোসাঁটো 
গল্প কই, রসদ কই লিখি
ক্লীবতা নিয়ে সাতকাহন?
ভাষা নেই।

যে টেলিফোন আসার কথা

আসেনি।

চলবে

3 thoughts on “ধারাবাহিকঃ জীবন কথাঃ যে টেলিফোন আসার কথা ২ – পার্থ বসু

Leave a Reply to ভূমিকা গোস্বামী। Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *