প্রবন্ধঃ স্বাধীনতা
ভূমিকা গোস্বামী
এবার এক অন্য রকম স্বাধীনতা দিবস। করোনার ভয়ে ঘরেই কাটবে এদিন। প্রতিবারের মতো ভিক্টোরিয়ার পাশে শ্রীঅরবিন্দের জন্মদিনে তাঁর বিশাল মূর্তির পায়ের কাছে যাওয়া হবে না। কোথাও পতাকা উত্তোলনে , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নেই। সারাদিনের কোন রকম ব্যাস্ততাহীন এমন স্বাধীনতা দিবস আগে কি কখনও পেয়েছি !
আমরা এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক। কিন্তু মানুষ কি সত্যিই স্বাধীন। ভেবে দেখেছেন, মানুষ তার নিজের কাছেই সব থেকে বেশী পরাধীন। তার ছোট আমি তার ভেতরের কাম ক্রোধ হিংসা লোভ পরশ্রীকাতরতায় জর্জরিত। পরাধীন। তা হলে কি করনীয়। রিপু কে জীবন থেকে কেটে ফেলে দিলেই কি আমরা সমস্ত সুখের অধিকারী হব ? না রিপুকে বাদ দেওয়া যায় না। তারও প্রয়োজন আছে। তবে কতটুকু প্রয়োজন সেটা বুঝতে হবে। রিপু যেন মানুষের বশে থাকে। মানুষ কখনও রিপুর বশ হয়ে না পরে। সেটাই পরাধীনতা।
নিত্য মৃত্যু সংসার সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া পরাধীন মানুষ একটু স্বাধীনতার আশায় নতজানু হয় ভারতীয় দর্শনের কাছে। দর্শন শেখায় সমতার পাঠ। সে শেখায় সমতাকেই যোগ বলে। সমত্বং যোগ উচ্চতে। ভারসাম্য প্রয়োজন। আমরা জানি, রক্তে প্রেসারের ভারসাম্যের অভাব হলে বা রক্তে সুগারের ভারসাম্যের অভাব হলে অথবা শারীরিক কোন রকম ভারসাম্য নষ্ট হলে আমরা বাঁচতে পারি না। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন -রিপুর প্রয়োজন আমাদের শরীরে তেতুলের প্রয়োজনের মতো। একটা দুটো। এদিকে তেতুল গাছ থাকলে ফল, ফুলের গাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাই তাকে বাগানের পিছনে রাখ। যত্নের প্রয়োজন নেই। কেটে ছেটে ছোট করে রাখ। যে দু একটা হবে তাতেই কাজ চলে যাবে। বাগানের সামনের দিকে চাই ফল ফুলের গাছ। তাকে যত্ন করে লালন কর। আমাদের সুকুমার বৃত্তিকেও তেমনি যত্ন করে লালন করতে হবে।
কিছু মানুষ ভাবকে আঁকড়ে বাঁচে। কেউ আবার ভয়ংকর বস্তুবাদী। এতেও ভারসাম্য চাই। কেবল বস্তুবাদ মানুষকে মেশিনে পরিণত করে। প্রেমের পরশ না থাকলে জীবনের আনন্দ কোথায় ? আবার শুধুমাত্র ভাব দিয়েও তো জীবন চলে না বাস্তবিক জ্ঞান ছাড়া। দর্শন বলছে — সম্ভূতি বা বস্তুবাদ আর অসম্ভূতি বা ভাব বাদ এই দুই এর ভারসাম্যে মানুষ মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পারে এবং অমৃত লাভ করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি তাঁর জীবনে এই দুটিকে নিয়েই চলেছেন।
কিছু মানুষ ইচ্ছের পরাধীন হয়ে ক্ষণিক সুখকে আমন্ত্রণ জানায়। পরে দীর্ঘস্থায়ী অসুখ বয়ে বেরায় জীবনভর। দীর্ঘস্থায়ী সুখের জন্য ক্ষণিক সুখকে বিসর্জন দেওয়াই শ্রেয়। কোনটি প্রেয় আর কোনটি শ্রেয় বুঝতে হবে। না বুঝে অনেক মানুষ আছেন প্রিয়-র পিছনে ছুটে সারাজীবন আফসোস করেন। এটাও একধরনের পরাধীনতা নয় কী ?
কেউ নেশার কাছে পরাধীন। কেউ আলস্যের। কেউ লোভের কেউ অহংকারের।এমন কত শত পরাধীনতার শিকার মানুষ।আসুন আজ স্বাধীনতার পুণ্য লগ্নে আমরা অঙ্গীকার করি – যার যার যে যে পরাধীনতা আছে সবকিছু অতিক্রম করে স্বাধীন হই।
উপহার তো আমরা রঙিন কাগজে মুড়ে দিতে বা নিতে পছন্দ করি। তেমনি স্বাধীনতাও একটি উপহার কেবলমাত্র যদি তা সংযমে আবৃত থাকে, নয়তো তা অভিশাপ।
একদম ঠিক।
বাহ্, অপূর্ব।
মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা। সহজ সাবলীল ভাষায় অপূর্ব নিবেদন।
কি সুন্দর করে পরাধীনতার বিষয়টা বোঝালেন। ভীষণ ভালো লাগলো।
অত্যন্ত সত্য কথা।