প্রবন্ধঃ রবীন্দ্রনাথের গানে বেদ কে চেনা – ভূমিকা গোস্বামী

রবীন্দ্রনাথের গানে বেদ কে চেনা

ভূমিকা গোস্বামী

বেদের সঙ্গে আমাদের তেমন পরিচয় নেই। বেদের ভাষা অর্থ সবই বোধগম্যের বাইরে। তাই হয়তো আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে দূরে সরে থাকি। তার তুলনায় উপনিষদ্‌– যা বেদের শেষ ভাগ তাকে কিছুটা চিনি।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানে বলি —-

” অচেনা কে ভয় কি আমার ওরে
অচেনা কে চিনে চিনে উঠবে জীবন ভরে।”

তাই অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে বেদজ্ঞ যাঁরা আছেন তাঁদের গ্রন্থ পড়ে, বিশেষত পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্যের বেদ চর্চা পড়ে যা যেটুকু জ্ঞান হয়েছে তার সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে রবীন্দ্রনাথের গানের মিল খুঁজে পেলাম। আশ্চর্য হলাম ছোট্ট বেলায় শেখা গান গুলি — যা বারবার গেয়েছি –সেগুলো বেদের গূঢ় গূঢ় রহস্যের ঝুড়ি।
“তোরা যে যা বলিস ভাই / আমার সোনার হরিণ চাই।” এই গানটি ছোট বেলায় একরকম বুঝতাম। সময়ের পাশাপাশি গানটির অর্থ আমার কাছে পালটে পালটে গেছে। যা বাজারে বিকোয় না, অর্থ দিয়ে কেনা যায় না তার প্রতি টান। যা অপ্রাকৃত তাকে তো প্রাকৃত বস্তু দিয়ে পাওয়া যায় না। দেহ মন বুদ্ধি দিয়েও নয়। কেবল অনুভবে তার নিত্য আসা যাওয়া।
যারে যায় না পাওয়া তারি হাওয়া রবীন্দ্রনাথের গায়েও এসে লেগেছিল। তাই কখনও বলেন –“-বসে আছি হে কবে শুনিব তোমার বাণী।” কখনও অধৈর্য হয়ে বলেন ” কবে তুমি আসবে বলে রইব না বসে আমি চলব আমি চলব বাহিরে।”
বসে থাকা নয়। কালক্ষেপ নয়। এগিয়ে চলা। এই এগিয়ে চলার নাম- ই জীবন। “চরৈবেতি চরৈবেতি”
রবীন্দ্রনাথ আমাদের খুব কাছের মানুষ। আপনজন। যিনি তাঁর গান নিয়ে সুখে দু:খে বিষাদে অথবা আনন্দে সর্বদা আমাদের পাশে আছেন।রবীন্দ্রনাথ
তিনি বেদ ও উপনিষদকে জেনেছেন তাই নয়—– তিনি বেদের সুক্তগুলিকে আত্মস্থ করেছেন। তাই বোধহয় অত্যন্ত সহজ হয়ে তাঁর গানে প্রকাশিত হয়েছে।

ঋগ্বেদের সুক্ত—— দেবা যদ্ যজ্ঞং তন্বানা / অবধ্নন পুরুষং পশুম্ ( ১০/৯০/১৫)
দেবতারা যখন যজ্ঞ করছিলেন তখন স্বয়ং স্রষ্টা কেই পশু রূপে বেঁধেছিলেন। অর্থাৎ এই জগত সৃষ্টি এক মহাযজ্ঞ। এখানে আহুতি দিতে সৃষ্টিকর্তা নিজেকেই উপাদান করে আহুতি দিলেন। তিনি সৃষ্টি করলেন না। সৃষ্টি হলেন।
আমরাও যখন বড় কিছু গড়ে তুলি তখন সামর্থের বাইরে গিয়ে নিজেকেই তো আত্মাহুতি দিয়ে ফেলি। রবীন্দ্রনাথের গানে এরই প্রতিধ্বনি ——- “আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি / আমার যত বিত্ত প্রভু আমার যত বাণী / সব দিতে হবে, সব দিতে হবে। আমার চোখে চেয়ে দেখা, আমার কানে শোনা / আমার হাতের নিপুণ সেবা, আমার আনাগোনা / সব দিতে হবে , সব দিতে হবে।” এই গানটির শেষ অংশে দেখি ———” আমার বলে যা পেয়েছি শুভক্ষণে যবে/ তোমার করে দেব তখন তারা আমার হবে। ”
সব দিয়ে সব পাওয়া। উপনিষদের ” তেন ত্যাক্তেন ভুঞ্জিথা”
উপনিষদের এই স্লোকটি অত্যন্ত মূল্যবান জীবন দর্শন। গান্ধীজী বলেছেন —- সনাতন ধর্মের সবকিছু যদি বিনষ্ট হয়ে যায় কেবল এই স্লোকটি থাকে তাহলেও সনাতন ধর্ম রক্ষা পাবে। স্লোকটি হল —-” ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ/ তেন ত্যাক্তেন ভুঞ্জিথা মা গৃধ কস্যস্বিদ ধনম্। ”
জগতের সবখানে ঈশ্বরের বাস। সকলের মধ্যে ঈশ্বরের অবস্থান। জগত টি পরিবর্তনশীল। তাই কিছুই স্থায়ী নয়। ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভোগ। অর্থাৎ যা পাও তাঁর প্রসাদ সবটাই। উপভোগ কর। অন্য কারো ধনে লোভ কোরো না।

একবার এই শ্লোকটি লেখা একটি পাতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের গায়ে এসে পড়ে। তখন তিনি শান্তিনিকেতন গড়ার কথা ভাবছেন। মানুষের সায় পেয়েছেন। মন তবু চঞ্চল। সে সময় এই শ্লোকটি পেয়ে তাঁর বিশ্বাস হল এই কাজে ভগবানেরও সায় আছে। যার ফলপ্রসু আমাদের শান্তিনিকেতন। যাজ্ঞবল্ক্যের এই শ্লোকটি ই শুধু নয় তাঁর অনেক প্রভাব রবীন্দ্রনাথ , দেবেন্দ্রনাথের মধ্যে পাই। যাজ্ঞবল্ক্য ছিলেন——- ব্রহ্মনিষ্ট গৃহস্থ। রবীন্দ্রনাথ , দেবেন্দ্রনাথও তাই। রবীন্দ্রনাথ তথাকথিত স্কুল কলেজের শিক্ষার বাইরে ছিলেন। যাজ্ঞবল্ক্য তাই। কথিত আছে—— যাজ্ঞবল্ক্য গুরু বৈশম্পায়ন একবার তাঁর স্কুলে একটি ছাত্র কে কোন প্রশ্ন করেছেন , তার উত্তর যাজ্ঞবল্ক্য দিয়েছিলেন। তাতে রেগে গিয়ে বৈশম্পায়ন যাজ্ঞবল্ক্যকে দেওয়া সমস্ত শিক্ষা কেড়ে নিয়ে তাঁকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরে সূর্যের উপাসনা করে নতুন বেদ পেলেন। সেটা হল শুক্ল যজুর্বেদ। অর্থাৎ যা মুখস্থ বিদ্যা নয়। বৈশম্পায়নের কাছ থেকে যা শিখেছিলেন তা কৃষ্ণ যজুর্বেদ। অন্ধ কুসংস্কার মুক্ত ছিলেন যাজ্ঞবল্ক্য।
তাঁর একনীড়মের ছবি দেখতে পাই শান্তিনিকেতনে। যত্র বিশ্বং ভবতি একনীড়ম্।
শ্রীঅরবিন্দ, রবীন্দ্রনাথ সকলেই এই একনীড়মের স্বপ্ন দেখেছেন। প্রথাগত শিক্ষার বাইরে আশ্রমের পরিবেশে সত্যিকারের শিক্ষিত করে তোলা ছাত্রছাত্রীদের। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম করে প্রকৃত মানুষ গড়ার ভাবনা।

বেদের কবি সুক্ত রচনা করে বলছেন——” ত্বম অস্য য়ন্তা সুক্তম্।”
এই সুক্তের নিয়ন্তা তুমি- ই। রবীন্দ্রনাথ বলছেন– “তুমি যা বলিবে তাই বলিব আমি কিছুই না জানি।/তব নামে আমি সবারে ডাকিব হৃদয়ে লইব টানি”

বেদের ঋষির কাছে দেবতা এক । একম্ অদ্বিতীয়ম্। কিন্তু তাঁর নানা নাম নানা রূপ। ইন্দ্র, অগ্নি, মিত্র, বরুণ সবই তাঁর নাম।

আমরা যেন চার তলা বাড়ী | দেহ প্রাণ মন চেতন | পঞ্চভূত- ক্ষিতি অব তেজ মরুত ব্যোম দিয়ে তৈরি দেহ | এর দেবতা
অগ্নি |
প্রাণের দেবতা বায়ু | মনের দেবতা ইন্দ্র | চেতনের যুগ্ম দেবতা মিত্র ও বরুণ | সীমার মধ্যে যা তা হল মিত্র | সীমার অতীত যা তা হল বরুণ |
বিশ্বামিত্রের পুত্র মধুচ্ছন্দার মন্ত্রমালা দিয়েই ঋক্ বেদ শুরু | এই সুক্তগুলিতে দেহের যজ্ঞবেদীতে অগ্নি দেবতা, প্রাণের ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ বায়ুদেবতা , মনের ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ ইন্দ্রিয়াধিপতি ইন্দ্র দেবতা , তার ঊর্ধ্বে মিত্রাবরুণ | এই যুগ্ম দেবতার ক্রমান্বয়ে স্তব | এই দিব্য পরম্পরায় মিত্রাবরুণই ঊর্ধ্বতম —- তিনি মিত্র রূপে সীমার আয়তনে দক্ষতা সম্পাদন করেন , তাই পুতদক্ষং | আবার বরুণরূপে আমাদের সীমার বন্ধনগুলি ছিন্ন করে অসীমের সামঞ্জস্যে তুলে ধরেন , “তাই রিসাদসং” |
কেন উপনিষদের আলোচনাচক্রে গল্পচ্ছলে এই মিত্রাবরুণের মাহাত্ম্যই প্রতিষ্ঠিত | সেখানে বরুণই ব্রহ্ম এবং মিত্রই উমা-হৈমবতী | তাঁরা দুই হলেও এক। বৈষ্ণবদের কাছে রাধাকৃষ্ণ যেমন। দুই হলেও এক। একজন শক্তি অন্যজন শক্তিধর।শক্তি ছাড়া শক্তিধর কিছু না। আবার শক্তিধর ছাড়া শক্তির কি মূল্য। তাই যুগল সাধনা। রবীন্দ্রনাথের গানে আকাশ বাতাস অগ্নি
পৃথিবী সব কিছু থেকেই এক অপ্রাকৃত প্রাপ্তির উল্লেখ পাই। যখন দেখি ধন্যবাদের ভাবে বলছেন——” আকাশ আমায় ভরল আলোয় / আকাশ আমি ভরব গানে” , আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে/ এ জীবন পুণ্য কর দহন দানে। পঞ্চভূতের রস দিয়েই আমাদের দেহ প্রাণ মন পুষ্ট হয়।রবীন্দ্রনাথ বলছেন– “একি সুধারস আনে/ আজি মম মনে প্রাণে।”
বৈদিক কবি বলছেন —— অগ্নিম্ ঈড়ে পুরোহিতম্। ঈড় ধাতুর একটি অর্থ স্তুতি করা। পুজো করা। আর একটি অর্থ— ইন্ধন জোগান। অর্থাৎ জ্বালিয়ে তোলা। পুরোহিতম্– অর্থ হে আমার জীবন যজ্ঞের নায়ক। রবীন্দ্রনাথের গানে পাই —- যাক অবসাদ বিষাদ কালো দীপালিকায় জ্বালাও / জ্বালাও আলো আপন আলো শুনাও আলোর জয়বাণীরে।
হে আমার জীবন যজ্ঞের নায়ক আমার সমস্ত আঁধার ঘুচিয়ে দাও। তামসীকে জয় করে আমার হৃদয়ে আলো জ্বেলে দাও। আর একটি গানে বলছেন—- প্রাণ মন দিয়ে জীবন বল্লভকে জীবনে রাখতে। আলো জ্বালতে বলছেন—- এ আলো বাইরের নয়। “আলো জ্বালো হৃদয় দীপে অতি নিভৃত অন্তর মাঝে / আকুলিয়া দাও প্রাণ গন্ধ চন্দনে।

ঋক্‌বেদে সাতজন মহিলা ঋষির মন্ত্রাবলি পাওয়া যায়। প্রথম মণ্ডলে অগস্ত পত্নী লোপামুদ্রা, পঞ্চম মণ্ডলে অত্রি কন্যা বিশ্ববারা, অষ্টম মণ্ডলে অত্রি কন্যা অপালা, দশম মণ্ডলে কক্ষিবৎ কন্যা ঘোষা, বিবাহ সুক্তের সাবিত্রী, অম্ভৃণ কন্যা বাক্, আর সপত্নী বাঁধন সুক্তের ইন্দ্রাণী।

বাক দেবীর একটি সুক্ত—- “অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসুনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্”
আমি রাষ্ট্রশক্তি আমি বসু বা ঐশ্বর্যের লেনদেন, আমি ক্রিয়াকান্ডের প্রথম যজ্ঞভাগী।
রবীন্দ্রনাথের আমি কবিতায় সেই সুর——“আমারি চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ চুনি উঠল রাঙা হয়ে”
আবার কখনও বলছেন —- “আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর তোমার প্রেম হত যে মিছে।”
রবীন্দ্রনাথ তাঁর তপতী নাটকে চারটি বেদ মন্ত্রের ব্যবহার করেছেন। তার মধ্যে দুটি ঋক্‌বেদ থেকে , একটি অথর্ববেদ থেকে, একটি যজুর্বেদ থেকে। তাছাড়া অনেকগুলি বেদের সুক্তের তিনি সুর করেছেন। কয়েকটির তিনি অনুবাদ ও সুর দু-ই করেছেন।
সপ্তম মণ্ডল, সুক্ত৮৯,ঋক্‌২-৪॥ বরুণ দেবকে বশিষ্ঠ ঋষি বলছেন—– য দেমি প্রস্ফুরন্নিব দৃতির্ণ ধ্মাতো অদ্রিবঃ /মৃঢ়া সুক্ষত্র মৃঢ়য় ॥
ক্রত্বঃ সমহ দীনতা প্রতিপং জগমা শুচে/ মৃঢ়া সুক্ষত্র মৃঢ়য়॥
অপাং মধ্যে তস্তিবাংস তৃষ্ণাবিদজ্জরিতারম্ । / মৃঢ়া সুক্ষত্র মৃঢ়য়॥
রবীন্দ্রনাথের অনুবাদটি এইরকম——–
” যদি ঝড়ের মেঘের মতো আমি ধাই চঞ্চল অন্তর
তবে দয়া কোরো হে ,দয়া কোরো হে ,দয়া কোরো হে ঈশ্বর।
ওহে অপাপ পুরুষ দীন হীন আমি এসেছি পাপের কূলে
প্রভু দয়া কোরো হে, দয়া কোরো হে, দয়া কোরে লও তুলে।
আমি জলের মাঝারে বাস করি তবু তৃষায় শুকায়ে মরি
প্রভু দয়া কোরো হে, দয়া করে দাও, সুধায় হৃদয় ভরি।”

ঈশ্বরের অনন্ত প্রেমে মশগুল ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ” ধায় যেন মোর সকল ভালবাসা প্রভু তোমার পানে তোমার পানে তোমার পানে।” সীমার মাঝে অসীমের সুর শুনতে পেতেন তিনি। কান পেতে থাকতেন হৃদয়ের গহন দ্বারে সেই বাণী সেই সুর শোনার আশায়।
কখনও ঋষি বশিষ্ঠের আর্তনাদ আকুতি শুনি তাঁর গানে। “কেন বাণী তব নাহি শুনি নাথ হে । অন্ধ জনে নয়ন দিয়ে অন্ধকারে ফেলিলে , বিরহে তব কাটে দিন রাত হে।” ঋষি সপ্তগু বলছেন—–জগৃভ্মা তে দক্ষিণম্ ইন্দ্র হস্তম্ (১০/৪৭/১)
রবীন্দ্রনাথ বলছেন— সম্পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে একই ভাবে—–
“জানি বন্ধু জানি তোমার আছে তো হাত খানি” তিনি কখনও সখা, কখনও বন্ধু, কখনও প্রিয়তম বলে সম্বোধন করছেন তাঁর প্রাণেশ কে। “প্রাণেশ আমার লীলা ভরে খেলেন প্রাণের খেলা ঘরে ”

ঈশ উপনিষদের ৬নং শ্লোক
যস্তু সর্বানি ভূতানি আত্মনেব অনুপশ্যতি।
সর্ব ভূতেষু চাত্মানং ততো ন বিজুগুপ্সতে

অর্থ হল —– যিনি নিজের আত্মায় সবাইকে এবং সবার মধ্যে নিজেকে দর্শন করেন তিনি কখনও কারো কাছ থেকে নিজেকে গোপন করেন না। সবাইকে আপন করার ভাবনা। পর বলে কেউ নেই। বসুধৈব কুটুম্বকম্। এই পৃথিবীর সবাই আপনজন।
আত্মীয়। যাজ্ঞবল্ক্যের এই মন্ত্রটি-ই বিশ্বভারতীর মূল মন্ত্র।

ঋষি ভরদ্বাজ বলছেন— পরিপূষা পরস্তাত্ হস্তং দধাতু দক্ষিণম্।
রবীন্দ্রনাথ বলছেন —– হাতখানি ওই বাড়িয়ে আনো , দাও গো আমার হাতে। ধরব তারে ভরব তারে রাখব তারে সাথে। একলা পথে চলা আমার করব রমনীয়।

ঋগ্বেদের কবি বলছেন —অগ্নে ত্বং নো ———– মনোবোধীশ্রুধী হবম্ (৫/২৪/১৩)

আমাদের কবি বলছেন——
মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে
একেলা রয়েছ নীরব শয়ন পরে
প্রিয়তম হে জাগো জাগো জাগো।

রবীন্দ্রনাথের সমস্ত গানই বেদের মন্ত্রের মত শুদ্ধ পবিত্র। বেদের ঋষির কখনও মনে হয় সুরের ধারাটি যেন বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে আকাশ থেকে।
ঋষি বশিষ্ঠ —– অভ্রাদ বৃষ্টির্ ইবাজনি (৭/৯৪/১)
রবীন্দ্রনাথ ও বললেন—-
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে পড়ুক ঝরে
তোমারি সুরটি আমার মুখের পরে , বুকের পরে

রবীন্দ্রনাথ সারা জীবনে যত সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে তাঁর
গানই শ্রেষ্ঠ। তিনি নিজেও বলেছেন সে কথা। বেদের সুক্তের মতো চিরকাল রবীন্দ্রনাথের গান আদরণীয় হবে জগতের সবখানে।
“তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে
সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে সবখানে সবখানে।”

4 thoughts on “প্রবন্ধঃ রবীন্দ্রনাথের গানে বেদ কে চেনা – ভূমিকা গোস্বামী

  1. সমৃদ্ধ হলাম লেখাটি পড়ে । কতকিছু জানতে পারলাম ।

Leave a Reply to Soumi Chakraborty Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *