বসন্ত ও নারী
সুচরিতা চক্রবর্তী
“বসন্ত তার গান লিখে যায় ধূলির পরে
কি আদরে “
কবি যে কতরকম করে বসন্ত আপ্যায়ন ও বিশ্লেষণ করেছেন তা কেবল রবীন্দ্র অনুসারীরাই জানেন।
আমি নিছক এক নারী বসন্ত মানেই বুঝি শিমুল পলাশ কোকিল আর প্রেমের সুবাস। ওই বুঝি কড়া নাড়ে দোরে অনন্ত সে প্রেমিক।
” কাল মৃগী আসিবে ফিরিয়া,
সকালে – আলোয় তাকে দেখা যাবে—
পাশে তার মৃত সব প্রেমিকেরা প’ড়ে আছে।”
রবীন্দ্রনাথের পর জীবনানন্দ দাশ যে বসন্তের উলটো পিঠ দেখালেন। বনের বিষ্ময়ের সাথে জীবনের বিষ্ময়।
ঝরা পাতার কেউ রাখে না খোঁজ । শ্মশানের চিতা ঘাট দাউ দাউ সে আগুন তুমিও কি বসন্ত বৈভব!
আমি তো এতো কিছু বুঝি না। বসন্তের রঙ বুঝি না, হৃদয় স্পর্শ বুঝি না কেবল বুঝি বসন্তের পুস্প শোভিত রূপ ও ছায়া। কবির কাব্য প্রতিভার বিকিরণ কখনো সখনো ছুঁয়ে যায় মন।
নদীর ধারে আপনি পূর্ণিমা আকাশ থেকে জলকে ছুঁয়ে একেবারে বুকে গিঁথে যায়। আহ পরম প্রশান্ত আহ পরম বসন্ত। কৃষ্ণচূড়া বিছিয়ে নিলেও বিছানা আমার রাধিকার নয়।
সময়ের ঘুর্ণ পাকে হল কর্ষিত সবুজ প্রান্তর কখন যেন ধুসর বিকেলের মতো মনে ভাবে বিগত শীত কেবলই নষ্ট সময়। বুকের ভেতর এলোমেলো ডানা মেলে বুকের নাচন। বুকের কাঁপন থরথর অবসর মেয়েমানুষ হরিণ হতে চায়! আবার বিষ্ময়।
আমি ছাদে গিয়ে বসি, গাছের আগায় থোকা থোকা ফুল, এলো পিঠ, হু – হু হাওয়া বসন্ত হলুদ হয়েছে হঠাৎ। এ কি চিত্রনাট্য? জীবনের দুরন্ত আহ্বান? কে হে তুমি রহস্যময় প্রকৃতির ডালি হাতে করো গান ? কে হে তুমি চিরন্তন নি:শব্দ রাত্রির মতোন আমাকে নিয়ে করো খেলা !
জীবনে মেঘ আসুক, বৃষ্টি নামুক, আসুক বিপর্যয় তবুও আমি স্বাপ্নিক, বুক চিতিয়ে উঠে দাঁড়াই প্রকৃত সে বসন্তের লোভে।
” এই তো জানু পেতে বসেছি, পশ্চিম
আজ বসন্তের শূন্য হাত
ধ্বংস করে দাও আমাকে যদি চাও
আমার সন্ততি স্বপনে থাক।”
ভাষার চিত্রপট আঁকলেন কবি। আমি বসন্ত রিক্ত শূন্য মনে শুনি গাজনের গান, দেখি শঙ্খ খেলা। বিচিত্র বিকিকিনি চলে মানুষের উৎসব মুখরিত আলোক বিচ্ছুরিত আঙিনায়।
কি চাও ও নারী যদি শুধোয় বসন্ত?
আজ এ ব্যপ্ত অন্ধকার,
নদীর অভিসার
রূপোলী তারার খোঁজ
নিভে যেতে যেতে উজ্জ্বল হোক
তাকে কি দিতে পারো!
একটি হলুদ ফুল নির্মেদ নির্ভুল!
ফাল্গুন এসেছে ফিরে বসন্ত সমারোহে। তাই কি কবি এলিয়ট এপ্রিলকে নিষ্ঠুর মাস বলেছেন?( ইংল্যান্ডে বসন্ত আসে এপ্রিলে) এ কি কেবলই কালিক ধারণা!
তুমি কি নারীকে দাও কেবল নি:শব্দ নির্জনতা।